পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে অনাস্থা ভোটে কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদায় ঘটল ইমরান খানের। শনিবার ১৩ ঘণ্টার বহু নাটকীয়তায় একতরফা অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালেন ইমরান। ভোটের পর অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। খবর জিও নিউজ।

১৭৪-০ ভোটে অনাস্থা ভোটে হেরে যান ইমরান খান। সংসদে মোট সদস্য ৩৪২।

এর আগে শনিবার রাত ১২টায় সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগে স্পিকার আসাদ কায়সার তার পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর পর প্যানেল অব চেয়ারের সদস্য আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে ভোটগ্রহণ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।

ভোটের প্রক্রিয়া শেষে আয়াজ সাদিক ঘোষণা করেন, ১৭৪ জন সদস্য রেজুলেশনের পক্ষে তাদের ভোট দিয়েছেন, ফলস্বরূপ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়েছে।

ফলাফল ঘোষণার পর বক্তৃতা দিতে শাহবাজ শরীফকে ডাকেন আয়াজ। তিনিই পাকিস্তানের সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রী বলে ভাবা হচ্ছে।

এর আগে স্পিকার কায়সার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমরান খানের ক্ষমতাসীন দলের বেশিরভাগ সদস্য বেরিয়ে যান। এর ফলে বিরোধী দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

শনিবার সকাল থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট এড়াতে পিটিআই সরকারের অনেক চেষ্টার পরও পাকিস্তান সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। এরপর চারবার বিরতি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত, বিরোধীরা ইমরানকে অপসারণে সক্ষম হলেন।

তার আগে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে সরিয়ে দেওয়ার খবরও রটে যায়। পরে তা ইমরান খান সরকার অস্বীকার করে।

ইমরান খান ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পেলেও তিনি ৩ বছর ৭ মাস ২৩ দিন অফিসে ছিলেন।

এর আগে পাকিস্তানে বেনজির ভুট্টো এবং শওকত আজিজ অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে তারা দুজনই জয়ী হন। শনিবার পাকিস্তান সময় রাত ১২টায় সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার ঠিক ১০ মিনিট আগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

সরদার আয়াজ সাদিক সংসদের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ভোট গ্রহণ শুরু করেন। তার আগে স্পিকার আসাদ কায়সার পদত্যাগ করেন। ইমরান খানের দলের সংসদ সদস্যরাও ওয়াকআউট করেন।

প্রথমে একবার অস্বীকার করলেও রাতে সংসদে অনাস্থা ভোটে সায় দেন দেশটির স্পিকার আসাদ কায়সার। ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজার আগে স্পিকার আসাদ কায়সার এবং ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সংসদে ফিরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে স্পিকার বের হয়ে যান। তারপর ভোট শুরু হয়।

জিও নিউজের খবরে বলা হয়, জাতীয় সংসদের সচিবের সঙ্গে আলাপের পর স্পিকার ভোটগ্রহণে সম্মত হন। আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করলে তাকে গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে বলে সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়।

জিও নিউজ জানায়, এর আগে স্পিকার কায়সার ভোটের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তার ৩০ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে, তাই তিনি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবেন না।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া অনাস্থা ভোট নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী খানের সাথে দেখা করেছেন।

আল জাজিরার সংবাদদাতা ওসামা বিন জাভেদ ইসলামাবাদ থেকে রিপোর্ট করেন যে একটি সরকারি সূত্রের মতে, আজ রাতে ভোট হবে না।

প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণী অধিবেশন শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়েছিল। তখন বিরোধীদলের সব সদস্য উপস্থিত থাকলেও ইমরান খানসহ সরকারি দলের সামনের সারির অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না।

পরে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হলেও নির্ধারিত ওই সময়ের দুই ঘণ্টা পর ফের অধিবেশন শুরু হয়।

ইফতার এবং মাগরিবের নামাজের জন্য অধিবেশন পুনরায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। পরে পাকিস্তন সময় রাত সাড়ে ৯টায় আবার অধিবেশন শুরু হয়।

এ সময়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সিনেটর মোস্তফা নওয়াজ খোখার অনাস্থা ভোট না হলে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানান।

খোখার টুইটারে লেখেন, আজ যদি স্পিকার এবং সরকার সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট আদেশ অনুসরণ না করে, তাহলে জেনারেল বাজওয়ার এ সংকটে ভূমিকা পালন করা উচিত।

এর আগে জিও নিউজ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, সম্ভবত অনাস্থা ভোট হবে না।

রোববার ইমরানের উপর আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ বর্ণনা করে ভোট বাতিল করে দিয়েছিলেন পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। পরে ইমরানের আহ্বানে দেশটির প্রেসিডেন্ট বর্তমান আইন সভা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সুরির ওই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে আইন সভা পুনরুজ্জীবিত করার রায় দেয় এবং অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট গ্রহণের জন্য শনিবার দিন ধার্য করে দেয়।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় ১০টায়) এই বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে কয়েকটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

জিও নিউজ বলেছে, সূত্রগুলো দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।